এবারে শরীরের সমস্ত ব্যথা দূর করুন একদম প্রাকৃতিক উপায়ে

এবারে শরীরের সমস্ত ব্যথা দূর করুন একদম প্রাকৃতিক উপায়ে

আজবাংলা  আমাদের চারপাশে বিভিন্ন ধরনের মানুষ দীর্ঘমেয়াদী ব্যথা বহন করে চলেছে বহুদিন ধরে । সাধরণত পিঠ, কাঁধ, হাঁটু, মাথা ও শরীরের অন্যান্য কিছু অংশে প্রদাহজনিত কারণে দীর্ঘমেয়াদি ব্যথা হতে দেখা যায়। প্যারাসিটামল বা এ জাতীয় ওষুধ সেবন করে থাকেন যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। অনেক খাদ্যই আছে যেগুলো ওষুধের থেকে বেশি কার্যকরী।

এই প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা এই ব্যাথার কমানোর জন্য কিছু খাদ্য উপাদানের কথা জানিয়েছেন। আজকের প্রতিবেদনে দেখে নেব কোন কোন খাদ্য উপাদানের কথা জানিয়েছেন তারা। প্রথমেই বলা হয়েছে হলুদের কথা। হলুদের মধ্যে থাকা কারকিউমিন উপাদান প্রদাহরোধী হিসেবে কাজ করে। দীর্ঘমেয়াদী ব্যথা কমাতে এক গ্লাস দুধের মধ্যে এক চামচ হলুদ গুঁড়ো মিশিয়ে নিয়মিত পান করুন।

রসুনের মধ্যে রয়েছে ব্যথানাশক উপাদান সালফার। এটি রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায় এবং পেশী ও গাঁটের ব্যথা ও ফোলা ভাব কমাতে উপকারী। এজন্য প্রতিদিন সকালে খালি পেটে এক কোয়া কাঁচা রসুন চিবিয়ে খাওয়া ভালো। এছাড়া আক্রান্ত স্থানে রসুন-তেল গরম করে নিয়মিত মালিশ করতে পারেন।

পেঁয়াজ প্রদাহরোধী হিসেবে খুবই উপকারী। এটি শরীরের বিভিন্ন অংশের ব্যথা ও প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। এছাড়া পেঁয়াজ এর মধ্যে রয়েছে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট যা বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে উপকারী।

আদার মধ্যে থাকা প্রদাহরোধী উপাদান জিনজেরলস ব্যথা ও প্রদাহ কমাতে বিশেষ ভূমিকা রাখে। দীর্ঘমেয়াদী ব্যথা কমাতে কয়েকটি আদার টুকরো চিবিয়ে খেতে পারেন অথবা নিয়মিত আদা চা পান করতে পারেন।

আর্থ্রাইটিসের ব্যথা কমাতে যে সব সামুদ্রিক মাছে তেলের পরিমাণ বেশি সেগুলো খান। যেমন, স্যামন, সার্ডিন বা টুনা। কারণ সামুদ্রিক মাছের ওমেগা ৩ ফ্যাট ব্যথা কমায়। দেশি মাছের মধ্যে পাঙ্গাশ, বোয়াল, রূপচাঁদা বা অন্যান্য সামুদ্রিক মাছ খাওয়া যেতে পারে। তিসির তেল, ক্যানোলা তেল, আখরোটেও ওমেগা ৩ ফ্যাট থাকে।

মাছে বিদ্যমান ফ্যাটি এসিড ইপিএ এবং ডিএইচএ এর পেটের অন্ত্রের প্রদাহ জনিত সকল রোগ দূর করার ক্ষমতা রয়েছে। এছাড়া চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ আকারে মাছের তেল পাওয়া যায় সেগুলো খেতে পারেন।

শরীরের অভ্যন্তরে প্রহরী হিসেবে কাজ করে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আর পলিফেনলের মত কিছু উপাদান। আপেল, ব্লুবেরি আর সবুজ শাক ও পাতাওয়ালা সবজীতে এসব উপাদান থাকে। যা ব্যথা এবং ব্যথার সম্ভাবনাকেও কমায়। পায়ের গিঁট বা গেঁট বাতের ব্যথা কমাতে চেরী ফল অনেক বেশি কার্যকরী। চেরীতে অ্যান্টি – ইনফ্লামেন্টরী এবং অ্যান্টি অক্সিডেন্ট উপাদান ব্যথার উপশম করে।

এক গবেষণা থেকে জানা যায়, কফি পানে ব্যায়ামজনিত ব্যথা দূর হয়। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত ২০০ মিলিগ্রাম ক্যাফিন পান করলে মাথাব্যথা, মাইগ্রেইনের ব্যথা অনেক কমে, তবে সেটা দীর্ঘসময়ের জন্যে নয়।

শরীরের বিভিন্ন ধরনের ব্যথা দূর করতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে ওটস। এতে প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম ও জিঙ্ক রয়েছে। দিনে এক কাপ আঙ্গুর খেলে পৃষ্ঠশূল উপশম হয়। আঙুরের রস বা আঙুর ধমনীর আড়ষ্টতা দূর করে।

চেরি স্বাস্থ্যের জন্য বেশ উপকারী। এটি ব্যথা সারাতে সবচেয়ে উপকারী ওষুধ হিসেবে কাজ করে। জ্বালাপোড়া থেকে সৃষ্টি ব্যথা ডার্ক চেরি খেলে দূর হয়। তবে শুধু চেরিই নয়; ব্যথা প্রতিরোধী হিসেবে অন্যান্য কালো ফলও উপকারী। গ্যাস্টিকের ব্যথা ও অন্যান্য জ্বালাপোড়ার প্রদাহ থেকে সৃষ্ট ব্যথা ২০টি চেরি ফল খেলেই অনেকটা কমে যাবে।

পেঁপেতে এক ধরনের এনজাইম রয়েছে যেটা প্রদাহ দূরীকরণে সাহায্য করে। সার্জারির ব্যথা কমাতেও পেঁপে জুস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এছাড়া এর অ্যান্টি অক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন শরীরের অন্য ব্যথা কমাতেও কাজ করে। লাল লঙ্কায় ক্যাপসাইসিন নামের একটি পদার্থ রয়েছে যেটি ব্যথা দূর করতে খুবই কার্যকর।

দইয়ে মাইক্রো-ফ্লোরা নামে একটি উপাদান আছে, যা প্রদাহ এবং বদহজমের কারণে সৃষ্ট গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। তিল বীজও ব্যথা সারাতে ভালো কাজ করে। এতে প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম রয়েছে, যা মাথা ব্যথা ও মাংস পেশীর ব্যথা অনায়াসে দূর করতে সাহায্য করে।

পুদিনা পাতায় মেনথল নামে একটি উপাদান আছে, যা ধনুষ্টংকার রোগ প্রতিরোধে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। এছাড়া, এর তেল পায়ের কজ্বি ও গোড়ালীতে মালিশে ব্যথা উপশম হয়। এমনকি মাথা ব্যথায় পুদিনা পাতা কপালে ঘষলেও ব্যথা উপশম হয়।

অ্যালোভেরা জেল পোড়ার ব্যথা উপশমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। আর এর জুসও আলসারের ব্যথা উপশমে কার্যকরী। দিনে ২বার অ্যালোভেরা পানে শুধুমাত্র এর উপসর্গই উপশম করে না; নিরাময়ের কাজও দ্রুত শেষ করে।

এছাড়া টমেটো, অলিভ অয়েল, সবুজ শাক, বিশেষ করে জামের মতো ফল, আনারস, গ্রিন টি, কমলা, আখরোট বা কাঠবাদাম খাবারগুলো নিয়মিত খান। এগুলো ব্যথা দূর করে। পরিবর্তনটা নিজেই লক্ষ করে দেখুন।

প্রক্রিয়াজাত সব ধরনের খাবার খাওয়া বাদ দিতে হবে। ওজন বাড়লে বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ওপর চাপ বাড়ে, ফলে ব্যথাও বাড়ে। তাই বিভিন্ন দিক বিবেচনা করে বুঝে শুনে খান, ভালো এবং সুস্থ থাকুন।