স্বাস্থ্যের উন্নতিতে মাশরুমের ভূমিকা দেখে নিন

স্বাস্থ্যের উন্নতিতে মাশরুমের ভূমিকা দেখে নিন

আজবাংলা   বর্তমানে সবজি হিসেবে মাশরুম বেশ জনপ্রিয়। এটি পুষ্টিকর, সুস্বাদু ও ঔষধিগুণ সম্পন্ন খাবার। এতে আছে প্রোটিন, ভিটামিন, মিনারেল, অ্যামিনো এসিড, অ্যান্টিবায়োটিক ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। স্বাদ, পুষ্টি ও ঔষধিগুণের কারণে এরই মধ্যে এটি সারা দেশে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

মাশরুমের প্রোটিনে-ফ্যাট এবং কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ অতি স্বল্প এবং কোলেস্টেরল ভাঙার উপাদান-লোভস্ট্রাটিন, অ্যান্টাডেনিন, ইরিটাডেনিন ও নায়াসিন থাকায় শরীরের কোলেস্টেরল জমতে পারে না বরং মাশরুম খেলে শরীরে বহু দিনের জমানো কোলেস্টেরল ধীরে ধীরে বিনষ্ট হয়ে যায়।

পুষ্টিগুণ: ১০০ গ্রাম শুকনো মাশরুমে ২৫-৩৫ গ্রাম প্রোটিন থাকে। প্রাকৃতিকভাবে মাশরুমেই সবচেয়ে বেশি ভিটামিন  ও মিনারেল বিদ্যমান। মাশরুমে আছে প্রচুর ক্যালসিয়াম, আয়রন, পটাশিয়াম ও সেলেনিয়াম, অ্যামাইনো এসিড, অ্যান্টিবায়োটিক ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। এসব উপাদান ডায়াবেটিস, ক্যান্সার, ইত্যাদি রোগ প্রতিরোধে ও ওজন কমাতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

মাশরুম সালাদ হিসেবে, ভেজে, সুপ করে বা রান্না করে খাওয়া যায়। প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় মাশরুম রাখা উচিত। তবে শুধু চাষ করে উৎপন্ন মাশরুম খেতে হবে। বুনো জায়গায় জন্মানো মাশরুম অবশ্যই গ্রহণ করা নিষেধ। আসুন আজকের প্রতিবেদনে দেখে নিন মাশরুম খেলে আমরা কি কি স্বাস্থ্য উপকারিতা পেতে পারি-

স্বাস্থ্য উপকারিতা:  মাশরুমে উচ্চমাত্রার আঁশ থাকে, সোডিয়ামের পরিমাণ কম থাকে এবং প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম থাকে যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এছাড়া মাশরুমে কোলেস্টেরল কমানোর অন্যতম উপাদান ইরিটাডেনিন, লোভাস্টটিন, এ টাডেনিন, কিটিন এবং ভিটামিন বি, সি ও ডি থাকায় নিয়মিত মাশরুম খেলে উচ্চ রক্তচাপও হৃদ্‌রোগ নিরাময় হয়।

মাশরুমের ফাইবার বা আঁশ পাকস্থলী দীর্ঘক্ষণ ভরা রাখতে সাহায্য করে। মাশরুম রক্তে চিনির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে এবং ওজন কমাতে সহায়তা করে। উচ্চ ফ্যাট সমৃদ্ধ লাল মাংসের পরিবর্তে মাশরুম গ্রহণ করলে ওজন কমানো সহজ হয়। এক গবেষণায় জানা যায়, লাল মাংসের পরিবর্তে সাদা মাশরুম গ্রহণ করলে ওজন কমে।

মাশরুমে নিয়াসিন ও রিবোফ্লাবিন থাকে যা ত্বকের জন্য উপকারী। ৮০-৯০ ভাগ পানি থাকে যা ত্বককে নরম ও কোমল রাখে। মাশরুমে পলিফেনলস ও সেলেনিয়াম নামের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে।

এতে মানুষের শরীরের জন্য অত্যাবশ্যকীয় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সালফারও থাকে। এ অত্যাবশ্যকীয় অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলো মারাত্মক কিছু রোগ, যেমন-স্ট্রোক, স্নায়ুতন্ত্রের রোগ এবং ক্যানসার থেকে শরীরকে রক্ষা করে।

এটি মানবদেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। সূর্যের আলোর সংস্পর্শে যে মাশরুম উৎপন্ন হয় তাতে প্রচুর ভিটামিন ডি থাকে, যা ক্যালসিয়াম ও ফসফরাসের শোষণ বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। ক্যানসার ও টিউমার প্রতিরোধে মাশরুম বেশ উপকারী।

নিয়মিত মাশরুম খেলে ব্রেস্ট ক্যানসার ও প্রোস্টেট ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি কম থাকে। মাশরুমের ফাইটোকেমিক্যাল টিউমারের বৃদ্ধিতে বাধার সৃষ্টি করে। মাশরুমের ভিটামিন বি স্নায়ুর জন্য উপকারী এবং বয়সজনিত রোগ যেমন- আলঝেইমার্স রোগ থেকে রক্ষা করে। মাশরুম গ্রহণ করলে রক্তে চিনির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে থাকে।

মাশরুমে এনজাইম ও প্রাকৃতিক ইনসুলিন থাকে যা চিনিকে ভাঙতে পারে। এতে থাকা ফাইবার ও এনজাইম হজমে সহায়তা করে। এটি অন্ত্রে উপকারী ব্যাকটেরিয়ার কাজ বৃদ্ধিতে সাহায্য করে এবং কোলনের পুষ্টি উপাদান শোষণকেও বাড়তে সাহায্য করে। মাশরুমের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও ভিটামিন- ডি আছে।

এছাড়া, শিশুদের দাঁত ও হাড় গঠনে এ উপাদানগুলো অত্যন্ত কার্যকরী। মাশরুমে নিউক্লিক এসিড ও অ্যান্টি এলার্জেন থাকায় এবং সোডিয়ামের পরিমাণ কম থাকায় কিডনি রোগ ও অ্যালার্জি রোগের প্রতিরোধক। মাশরুমে স্ফিংগলিপিড এবং ভিটামিন-১২ বেশি থাকায় স্নায়ুতন্ত্র ও স্পাইনাল কর্ড সুস্থ রাখে।

মাশরুম খেলে হাইপার টেনশন দূর হয় এবং মেরুদণ্ড দৃঢ় থাকে। হেপাটাইটিস বি ও জন্ডিস প্রতিরোধ করে। অ্যানিমিয়া বা রক্তস্বল্পতা থেকে রেহাই পাওয়া যায়। মাশরুমের খনিজ লবণ দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধিতে সহায়ক।