শনি ঠাকুর ।। বড় ঠাকুর

হিন্দুধর্মের প্রচলিত দেবদেবীদের মধ্যে অন্যতম একজন হলেন শনি ঠাকুর shani dev mantra in bengali। হিন্দু জ্যোতিষশাস্ত্রের নবগ্রহের অন্যতম হলেন তিনি। বড় ঠাকুর, শনিদেব, শনি মহারাজ, ছায়াপুত্র, রবিনন্দন ইত্যাদি নানা নামেও তিনি পরিচিত। সাধারণ মানুষের মধ্যে শনি ঠাকুরের কোপ সম্পর্কে ভয়ভীতি বর্তমান। প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী তাঁর রোষে পড়লে মানুষের ক্ষতি হয়।
সেই কারণে নানা আচারবিচার পালনের মাধ্যমে শনি ঠাকুরের পূজা করে তাঁকে তুষ্ট রাখা হয়। বিশ্বাস করা হয় যারা মন্দ ও অসৎপথে চলে, শনি ঠাকুর তাদের শাস্তি দেন আবার সৎকার্যের জন্য পুরস্কৃতও করেন। সেজন্য তাঁকে ন্যায়বিচারের দেবতা বলা হয়। পশ্চিমবঙ্গ সহ ভারতের অন্যান্য রাজ্যে বিশেষ করে মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশ, হরিয়ানা, তামিলনাড়ু, কর্ণাটক ইত্যাদি রাজ্যে শনি ঠাকুরের মন্দির রয়েছে এবং ধুমধাম করে সেসব জায়গায় তাঁর পূজা হয়ে থাকে।
পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে শনি ঠাকুর হলেন সূর্যদেবতা এবং তাঁর স্ত্রী ছায়ার সন্তান। সূর্যের স্ত্রী সন্ধ্যা সূর্যের প্রচন্ড উত্তাপ সহ্য করতে না পেরে চলে গিয়েছিলেন। প্রথমে পিতার কাছে গেলে পিতা তাঁকে স্বামীর গৃহে ফিরে যাওয়ার কথা বলেন। সেই উপদেশ মনঃপুত না হওয়ায় সন্ধ্যা অরণ্যে চলে যান । সন্ধ্যার এই নিঁখোজ হওয়ার খবর যাতে কেউ না জানতে পারে সেই কারণে তিনি নিজেরই অনুরূপ এক স্ত্রীলোকের নির্মাণ করেন, যাঁর নাম ছায়া। সন্ধ্যা ছায়াকে নির্দেশ দেন সূর্যদেবের কাছে স্ত্রী হিসেবেই থাকতে এবং সাবধান করে দেন এই গোপন কথা যেন স্বামী জানতে না পারেন।
ইতিপূর্বে সন্ধ্যার যে তিনসন্তান ছিল অর্থাৎ বৈবস্বত মনু, যম এবং যমী, তাঁদেরকেও ছায়ার নিকট সমর্পণ করেন সন্ধ্যা। তারপর সূর্যের সঙ্গে ছায়ার মিলনে শনি ঠাকুরের জন্ম হয়। ছায়া তখন স্বামীর সেবায় এতখানিই নিয়োজিত ছিলেন যে, সূর্যের প্রচন্ড উত্তাপের ফলেই শনি ঠাকুর সম্পূর্ণরূপে কালো রূপ নিয়ে জন্মেছিলেন। সূর্যের মতো উজ্জ্বলতা তো তাঁর ছিলই না, বরং সম্পূর্ণ কৃষ্ণাঙ্গরূপে শনির জন্ম হয়েছিল বলে সূর্যদেব প্রথমে শনি ঠাকুর তাঁর নিজের সন্তান কিনা সে বিষয়ে সন্দেহ করেছিলেন। মায়ের এইরূপ অপমানে শনি ঠাকুর রুষ্ট হন এবং সূর্যের দিকে নিষ্ঠুর দৃষ্টি নিক্ষেপ করেন, যা সূর্যের দেহকে পুড়িয়ে কালো করে ফেলে। তখন সূর্য ভগবান শিবকে সাহায্যের জন্য স্মরণ করেন।
শিব এসে তাঁকে শনির ক্রোধের কারণ ব্যাখ্যা করলে সূর্য তাঁর ছেলের কাছে ক্ষমা চেয়েছিলেন এবং অবশেষে তাঁর আগের চেহারা এবং ক্ষমতা ফিরে পেয়েছিলেন। শনি ঠাকুর হলেন কৃষ্ণের একনিষ্ঠ ভক্ত। ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ অনুযায়ী, শনিকে কৃষ্ণের অবতার বলা হয়ে থাকে। কৃষ্ণের জন্ম হলে সমস্ত দেবতা যখন নন্দগাঁওতে কৃষ্ণকে দেখতে গিয়েছিলেন তখন যশোদা শনিকে তাঁদের গৃহে প্রবেশ করতে বাধা দেন। তিনি আশঙ্কা করেছিলেন শনির কুদৃষ্টি শিশু কৃষ্ণের ক্ষতিসাধন করতে পারে। শনিদেব তখন দুঃখিত মনে নিকটবর্তী বনে তপস্যা করতে যান।
শ্রীকৃষ্ণ শনিদেবের সামনে উপস্থিত হয়ে তাঁকে তাঁর তপস্যার কারণ জিজ্ঞেস করেন। শনি কৃষ্ণকে দেখতে না পাওয়ার দুঃখ প্রকাশ করেন এবং মানুষের প্রতি তাঁর হতাশাও ব্যক্ত করেন। তখন শ্রী কৃষ্ণ শনিকে বর দিয়েছিলেন যে তাঁর উপাসনাকারী মানুষেরা তাদের সমস্যা থেকে মুক্তি পাবে। পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে, শনির কুদৃষ্টির জন্যই গণেশের মাথা শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল। শনি ঠাকুর তাঁর এই দৃষ্টির কথা সম্পূর্ণভাবে ব্যাখা করলেও দেবী পার্বতী তাঁকে বলেছিলেন সদ্যজাত গণেশের দিকে তাকিয়ে আশীর্বাদ করতে।
তখন শনির আধখোলা চোখের দৃষ্টি গণেশের ওপর পড়তেই এই গণেশের মুন্ডচ্ছেদ হয়ে যায়। শনি ঠাকুর হলেন যমের ভাই এবং ন্যায়বিচারের দেবতা। শনি ছিলেন তাঁর ভাই যমের থেকে বয়সে ছোট। মানুষের বিচারকার্যের ভার দেওয়া হয় এই দুই ভাইয়ের ওপর। মানুষের জীবদ্দশাতে অন্যায়কারী মানুষের বিচার করে শাস্তিবিধান করেন শনি ঠাকুর এবং যম মৃত্যুর পরে মানুষের অপকর্মের শাস্তি দেন। মানুষের সৎ-অসৎ কর্ম ও আচরণের ওপর নির্ভর করে শনি ঠাকুর কখনও শাস্তি কখনও আশীর্বাদ প্রদান করে থাকেন।
তাঁর রোষানলে যেমন চরম সর্বনাশ ঘটতে পারে তেমনই তিনি প্রসন্ন হলে সমৃদ্ধিও লাভ করা যায়। সেজন্য বলা হয় তিনি নিরপেক্ষ ও ন্যায়পরায়ণ। একবার শনি ঠাকুর লঙ্কাধিপতি রাবণ রাজার কাছে বন্দী অবস্থায় ছিলেন। তখন হনুমান তাঁকে সেই বন্দীদশা থেকে মুক্ত করেছিলেন। কৃতজ্ঞতাবশত, শনি ঠাকুর হনুমানকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে, যে ব্যক্তি হনুমানের প্রার্থনা করবে তাঁর ওপর শনি ঠাকুর নেতিবাচক প্রভাব কিছুটা হ্রাস করে দেবেন। সেকারণে যাঁদের জন্মপত্রিকায় শনিদোষ বর্তমান তাঁরা হনুমানের প্রার্থনা করে থাকেন।
শনি ঠাকুরের রঙ হিসেবে সাধারণত কালো বা নীল বর্ণই প্রচলিত রয়েছে। তাঁর মূর্তি হিসেবে কখনও দুটি হাতের একটিতে ধনুক এবং অন্যটিতে তীর ধরে বাহন কাকের পিঠে বসে থাকতে দেখা যায় তাঁকে। আবার কখনও মহিষের পিঠে বসা, চারহাত সম্বলিত, তলোয়ার, ধনুক ও তীরে সজ্জিত শনিদেবের মূর্তিও দেখা যায়। তবে অধিক প্রচলিত মত অনুসারে কাককেই শনির বাহন এবং ডুমুর গাছকে শনিদেবের বাসস্থান হিসেবে ধরা হয়। ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্রান্তে বেশ কিছু শনিমন্দির রয়েছে। শিংনাপুর ধাম একটি বিখ্যাত পবিত্র স্থান। মহারাষ্ট্রের আহমেদনগর জেলার নেভাসা তালুকে এই শনিমন্দির খুবই বিখ্যাত। এছাড়াও মধ্যপ্রদেশ, হরিয়ানা, তামিলনাড়ু, কর্ণাটক, পশ্চিমবঙ্গ ইত্যাদি বিভিন্ন রাজ্যে অনেক শনিমন্দির রয়েছে। শনিবার হল শনি ঠাকুরের পূজার দিন। ভক্তেরা নিয়ম করে শনিবারে তাঁর পূজা করেন।
আরো পড়ুন জীবনী মন্দির দর্শন ইতিহাস ধর্ম জেলা শহর শেয়ার বাজার কালীপূজা যোগ ব্যায়াম আজকের রাশিফল পুজা পাঠ দুর্গাপুজো ব্রত কথা মিউচুয়াল ফান্ড বিনিয়োগ জ্যোতিষশাস্ত্র টোটকা লক্ষ্মী পূজা ভ্রমণ বার্ষিক রাশিফল মাসিক রাশিফল সাপ্তাহিক রাশিফল আজ বিশেষ রান্নাঘর প্রাপ্তবয়স্ক বাংলা পঞ্জিকা