শ্রীরামকৃষ্ণ হয়েছিলেন কল্পতরু! ঠিক কি ঘটেছিল এইদিন ?

আজবাংলা কল্পতরু উৎসব। ১৮৮৬ সালের ১ জানুয়ারি ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণের এক বিশেষ লীলামাহাত্ম্যের কারণেই এই দিনটি রামকৃষ্ণ ভক্তরা পালন করেন। ঠিক কী করেছিলেন ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ?
১৮৮৫ সালের প্রারম্ভে তিনি ক্লার্জিম্যান’স থ্রোট রোগে আক্রান্ত হন। ক্রমে এই রোগ গলার ক্যানসারের আকার ধারণ করে। কলকাতার শ্যামপুকুর অঞ্চলে তাঁকে নিয়ে আসা হয়। বিশিষ্ট চিকিৎসক মহেন্দ্রলাল সরকার তাঁর চিকিৎসায় নিযুক্ত হন। অবস্থা সংকটজনক হলে ১৮৮৫ সালের ১১ ডিসেম্বর তারিখে তাঁকে স্থানান্তরিত করা হয় কাশীপুরের এক বিরাট বাগানবাড়িতে।
এখানেই লোকশিক্ষক পরমপুরুষ শ্রীরামকৃষ্ণ নিজেকে কল্পতরু হিসেবে ঘোষণা করেন এই দিন। কাশীপুর বাগানবাড়িতে ঘুরতে ঘুরতে ১ জানুয়ারি সকালবেলা গিরিশচন্দ্র ঘোষকে নিজের অবতারত্ব জিজ্ঞেস করেন ঠাকুর।
১লা জানুয়ারীর ওই দিনে ঠাকুর প্রায় সমাধিস্থ অবস্থায় বলেন— ‘‘তোমাদের কি আর বলবো, আশীর্বাদ করি তোমাদের চৈতন্য হউক।’’ এই সময়ে ঠাকুর উপস্থিত গৃহী ভক্তদের বুক পিঠে হাত বুলিয়ে দেন। সেই স্পর্শে অলৌকিকের ছোঁয়া অনুভব করেছিলেন উপস্থিত গৃহী ভক্ত ও অন্যান্য ঠাকুর-ঘনিষ্ঠরা |ঠাকুরের এই উক্তিকে পরম মহিমা বলে মনে করেন ভক্তরা।
১৮৮৬ সালের ১ জানুয়ারি এই উৎসব শুরু হয়েছিল। এই দিন রামকৃষ্ণ পরমহংস তাঁর অনুগামীদের কাছে নিজেকে ঈশ্বরের অবতার বলে ঘোষণা করেছিলেন। বিভিন্ন জায়গায় এই উৎসব পালিত হলেও কাশীপুর উদ্যানবাটীতে (বর্তমানে রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের একটি শাখাকেন্দ্র) এই উৎসব মহাসমারোহে পালিত হয়। এখানেই রামকৃষ্ণ পরমহংস জীবনের শেষদিনগুলি অতিবাহিত করেছিলেন। রামকৃষ্ণ পরমহংসের অনুগামীরা এই উৎসবকে "ঠাকুরের বিশেষ উৎসব"গুলির অন্যতম উৎসব হিসেবে গণ্য করেন।
দক্ষিণেশ্বর কালীবাড়িতেও এই উৎসব মহাসমারোহে পালিত হয়। সারা দেশ থেকে রামকৃষ্ণ-অনুগামী তীর্থযাত্রীরা এই দিন দক্ষিণেশ্বর কালীবাড়িতে পূজা দিতে আসেন।রামকৃষ্ণ পরমহংসের অন্যতম শিষ্য রামচন্দ্র দত্ত ব্যাখ্যা করে বলেছিলেন, সেই দিন রামকৃষ্ণ পরমহংস হিন্দু পুরাণে বর্ণিত কল্পতরুতে পরিণত হয়েছিলেন।
তিনিই এই দিনটিকে কল্পতরু দিবস নাম দিয়েছিলেন, যা পরে কল্পতরু উৎসব নামে পরিণত হয়েছিল। উল্লেখ্য, এই দিন রামকৃষ্ণ পরমহংসের গৃহস্থ শিষ্যরাই তাঁর কাছে উপস্থিত ছিলেন। তাঁর সন্ন্যাসী শিষ্যেরা সেই দিন তাঁর কাছে ছিলেন না।