জিভে জল আনে, তেঁতুলের সঙ্গে মিশিয়ে খান এটি, উপকারীতা জানলে অবাক হবেন

জিভে জল আনে, তেঁতুলের সঙ্গে মিশিয়ে খান এটি, উপকারীতা জানলে অবাক হবেন

আজ বাংলা: তেঁতুল....এই খাবারটির নাম শুনলেই জিভে জল আসে। টক-জাতীয় খাবার যাদের পছন্দ, তাঁদের পছন্দের খাবারের তালিকায়। টক, ঝাল, মিষ্টির স্বাদে আহ্লাদে ভরপুর এই বাংলা। তবে টক বলতেই যার কথা মনে আসে সেটি হল তেঁতুল। 


আমরা কম বেশি সবাইই তেঁতুল খেতে পছন্দ করি। আর এটা বসন্তের ফল হলেও শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষা সবসময়ই পাওয়া যায়। তাই যারা এটা পছন্দ করে তাদের খাদ্যতালিকায় তেঁতুলের আচার সবসময় পাওয়া যায়।দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে মূল্যবান খাবারের মধ্যে তেঁতুল অন্যতম। 

সারাবিশ্বে রস আস্বাদন ফল হিসেবে পরিচয় লাভ করেছে এই তেঁতুল। কাঁচা, পাকা, আচার কিংবা সস তৈরি করে বিভিন্নভাবে খাওয়া যায়। পাকা তেঁতুল সংরক্ষণ করে সারাবছর খাওয়া যায়। তবে তেঁতুল খাওয়ার উপকারিতা শুনলে আপনি অবাক হবেন। জেনে নিন তেঁতুলের পুষ্টিগুণ।

কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি মেলে: হ্যাঁ এটাই সত্যি। তেঁতুলে থাকা নির্দিষ্ট কিছু প্রোটিন গর্ভাবস্থায় কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করে। গর্ভাবস্থায় অন্যতম প্রধান সমস্যা হচ্ছে ব্লাড প্রেসার। তেঁতুলের পটাশিয়াম এবং আয়রন ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে। 


তেঁতুল, শরীরে অ্যাসপিরিন জাতীয় ওষুধের কাজে বাঁধা তৈরি করে থাকে। তেঁতুলের মধ্যে টার্টারিক অ্যাসিড, ম্যালিক অ্যাসিড এবং পটাশিয়াম আছে। এখনও আয়ুর্বেদে তেঁতুল পাতা ডায়েরিয়া সারাতে ব্যবহার করা হয়। এছাড়া তেঁতুল গাছের ছাল এবং শিকড় পেটের ব্যথা সারাতে ব্যবহার করা হয়।

মস্তিষ্কের জন্য উপকারী: তেঁতুল মস্তিষ্কের ক্ষতি করে বলে অনেকেই মনে করে থাকেন কিন্তু তাও ভুল বরং মস্তিষ্কের জন্য উপকারি এই তেঁতুল ।

তেঁতুলের মধ্যে থাকা অ্যাসকরবিক অ্যাসিড, যা খাবার থেকে আয়রন সংগ্রহ করে বিভিন্ন কোষে তা পরিবহণ করে, এটি মস্তিষ্কের জন্য খুব দরকার।আয়রনের সঠিক পরিমাণ মস্তিষ্কে পৌঁছলে চিন্তা ভাবনার গতি আগের থেকে অনেক বেশি বেড়ে যায়। 


এছাড়া তেঁতুলগাছের পাতা, ছাল, ফলের শাঁস (কাঁচা ও পাকা), পাকা ফলের খোসা, বীজের খোসা সব কিছুই শরীরে উপকারী । এই গাছের কচিপাতায় রয়েছে যথেষ্ট পরিমাণে অ্যামাইনো অ্যাসিড।পাতার রসের শরবত সর্দি-কাশি, পাইলস ও প্রস্রাবের জ্বালাপোড়ায় বেশ কাজ করে রোগ উপশম করার।

বদহজম থেকে মুক্তি: বাসি তেঁতুল এক কাপ জলে ভিজিয়ে সামান্য নুন, চিনি বা গুড় মিশিয়ে খেলে কারোর পেট ফাঁপা বা বদহজম একেবারে সেরে যায়। শুধু তাই নয়, ক্যালসিয়ামের পরিমাণ ৫ থেকে ১০ গুণ বেশি এই তেঁতুলে। এই তেঁতুলে অন্যান্য পুষ্টি উপাদান স্বাভাবিক পরিমাণে বিদ্যমান।


এমনকি স্কার্ভি রোগ, কোষ্ঠবদ্ধতা, শরীর জ্বালা করা প্রভৃতি রোগে তেঁতুলের শরবত খুব উপকারী। তেঁতুল রক্তের কোলস্টেরল কমায়। মেদভুঁড়ি কমায়। পেটে গ্যাস হলে তেঁতুলের শরবত খেলে ভালো হয়। তেঁতুল খেলে কোনো ক্ষতি হয় না। তবে বেশি খেলে রক্তের চাপ কমে যেতে পারে।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে: এই তেঁতুলের বীজ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম। এছাড়া এটি রক্তে চিনির মাত্রাও ঠিক রাখে। এতে উপস্থিত এক ধরণের এনজাইম রক্তে চিনির মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। তেঁতুলে উচ্চ মাত্রায় ফাইবার আছে আর একই সঙ্গে এটা সম্পূর্ণ ফ্যাট ফ্রি। 

স্কার্ভি রোগের প্রতিরোধ করে: রোদ্দুর থেকে ঘুরে এসে তেঁতুলের টক-মিষ্টি সরবত খেতে পারেন, আরাম পাবেন। স্কার্ভি রোগের প্রতিরোধে তেঁতুল অত্যন্ত কার্যকরী। ঋতু পরিবর্তনের সময়ে ঠান্ডা লাগা বা সর্দিকাশি থেকে সর্দিকাশি থেকে রেহাই পেতে গোলমরিচ মেশানো তেঁতুলের পানীয় উষ্ণ করে খান। 


তেঁতুলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি আর অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান যেগুলি শারীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। ক্ষত সারাতেও তেঁতুল অত্যন্ত কার্যকর!

রক্তাপ্লতার সমস্যা দূর করে: রক্তাপ্লতার সমস্যায় কাজে দেয় তেঁতুল। প্রসাবের সময়ে জ্বালা করলে পুরনো তেঁতুলের কাথ যথেষ্ট। পুরনো তেঁতুল জীবাণুনাশক ও পচন নিবারক।

তাই মাছ-মাংস রান্না করবার সময়ে খাদ্যগুণ বজায় রাখতে তেঁতুল ব্যবহার করতে পারেন। ন্যাচারাল প্রিজারভেটিভ হিসেবেও ভাল কাজ করে তেঁতুল। 


এছাড়া বাতের ব্যথা ও ফোলার কষ্ট কমাতে তেঁতুল পাতার নির্যাস ফুটন্ত গরম জলে মিশিয়ে সেঁক দিন, আরাম পাবেন। শুধু তেঁতুল ফল নয়, এই গাছের ছালের নির্যাস পক্ষাঘাত রোগের চিকিৎসায় কাজে দেয়, এমনকি হাঁপানি রোগ সারাতেও ভূমিকা রাখে।