তর্পন কি এবং কেন করিতে হয় ? পিতৃ তর্পন করিবার নিয়ম কি কি ?

তর্পন কি এবং কেন করিতে হয় ? পিতৃ তর্পন করিবার নিয়ম কি কি ?

আমরা অনেকেই তর্পন শব্দটির সাথে কম বেশি পরিচিত। মহালয়ার দিন তর্পনের জন্য প্রসিদ্ধ বিবেচিত। এসময় প্রয়াত পুর্বপুরুষের আত্মা সর্বনিম্ন স্তরে অর্থাৎ পৃথিবীর খুব কাছে বিরাজ করে। এসময় যদি তর্পন করা হয় তবে তর্পনের উদ্দেশ্য সফল হয়। তর্পন কাহাকে বলে ? তর্পনঃ “তর্পন” শব্দটি এসেছে “ত্রুপ” থেকে। “ত্রুপ” কথার মানে “সন্তুষ্ট করা”।

ঈশ্বর, ঋষি ও পুর্বপুরুষের আত্মার উদ্দেশে জল নিবেদন করে তাদের সন্তুষ্ট করাকে তর্পন বলা হয়। শাস্ত্রোক্ত মতে কার্য্য দ্বারা অপরের তৃপ্তি হয়, তাহাই তর্পন(অপরের প্রীতার্থে জল দান) । তর্পনের উদ্দেশ্য বা কেন করিতে হয় ? - তর্পনের সময় ঈশ্বর, পুর্বপুরুষের আত্মার নাম উচ্চারন পুর্বক তাদের কাছে সুখ শান্তি কামনা করা হয়। মানুষ জীবন রক্ষার্থে, ইচ্ছায় বা অনিচ্ছা সত্ত্বেও প্রাণীয়াদি হিংসা করিয়াই বধ করিয়া থাকে ।

ইহা ব্যতিত ও অন্যান্য অপকর্মের দরুন শাস্ত্রমতে পাপগ্রস্থ হইতে হয় । এই পাপ মোচনার্থে সনাতন শাস্ত্র মতে তর্পন করিতে হয় । তর্পন মন্ত্র অর্থঃ- ব্রক্ষা হইতে তৃণ শিখা পর্যন্ত সমস্ত জীব জগৎ মদ্দত্ত জল দ্বারা তৃপ্ত হউক, এই প্রার্থনা । বিদ্রঃ- পিতা-মাতা জীবিত থাকা কালিন প্রেত তর্পন ভিন্ন অন্য তর্পন করিতে নাই । তর্পন করিবার পূর্বে জল শুদ্ধি করিবেন ও উক্ত জলে কুরুক্ষেত্রের মন্ত্র পাঠ করিয়া শুদ্ধি করিবেন । এই জিল দিয়া তর্পনের কার্য্য করিবেন।

তর্পন করিতে কি কি লাগে ? - কুশিতে কুরুক্ষেত্র মন্ত্র পাঠের জল, চন্দন, তিল, তুলসী পত্র ওঁ ত্রিপত্রী দিয়ে তর্পন করিতে হয় । জেনে রাখুন, পিতৃ ওঁ মাতৃ তর্পনের সময় জল, তিল,চন্দন, তুলসী পত্র ওঁ ত্রিপত্রী আর অন্যন্য তর্পনের সময় তিলের পরিবর্তে ধান্য বা যব লাগিবে ।চন্দন, তিল, যব না থাকিলে কুরুক্ষেত্র মন্ত পাঠের জলে তুলসী পত্র দিয়া তর্পন করিবেন ।

তিল তর্পনঃ তিল তর্পন মানে জল ও তিল একসাথে করে পুর্বপুরুষের আত্মার উদ্দেশে নিবেদন করতে হবে। পিতৃতর্পণের সময় অবশ্যই তিল ব্যবহার করতে হবে। তিল ২ রকম- সাদা ও কালো তিল। শ্রদ্ধার সময় কালো তিল ব্যবহার করা উচিত। যত জনের জন্য শ্রাদ্ধ করা হচ্ছে প্রত্যেকের উদ্দেশে আলাদা আলাদা করে তিল অর্পন করতে হবে।

তিল না থাকিলে শুধু কুরুক্ষেত্র মন্ত্র পাঠের জলে তুলসী পত্র দিয়া তির্পন করিতে পারিবেন । তিল তর্পন করার উদ্দেশ্যঃ তিল ব্যাবহারের মাধ্যমে নেতিবাচক ও আসুরিক শক্তি শ্রাদ্ধকারির মাঝে প্রবেশ করতে পারেনা। স্রাদ্ধের দিন ঘরে তিল ছিটিয়ে দিতে হয়। জলের সাথে তিল মিশিয়ে শ্রাদ্ধে আগত ব্রাহ্মণদের খেতে দিতে হয়। শ্রাদ্ধ শেষে তিল ডান করতে হয়।

তর্পন প্রকার :  ১) পিতৃ তর্পন । ২)মাতৃ তর্পন । ৩) গুরু তর্পন । ৪) ঋষি তর্পন । ৫) দিব্য পিতৃতর্পন । ৬) যম তর্পন । ৭) ভীষ্ম তর্পন । ৮) বাম তর্পন । ৯)লক্ষণ তর্পন ১০) শূদ্র তর্পন ।