প্রাথমিক স্কুলের চাকরি খুইয়ে ধরনায় বসা সেই তরুণীর মুখে যুদ্ধ জয়ের হাসি

অপমান, অবহেলা উপেক্ষা করে অবশেষে জয়ী হল মনের মানুষকে পাওয়ার একাগ্র জেদ ও অপূরণীয় ভালোবাসা। কোচবিহারের নিশিগঞ্জের অতিথি অধ্যাপক প্রেমিকের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধার প্রথম পর্বে উত্তীর্ণ হলেন প্রাথমিক স্কুলের চাকরি থেকে বরখাস্ত হওয়া তরুণী। আদালতের নির্দেশে যে ২৬৯ জন প্রাথমিক শিক্ষক-শিক্ষিকাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে, তাঁদের মধ্যেই এক জন হলেন নিবেদিতা। কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশে প্রেমিকার শিক্ষকতার চাকরি যেতেই বেঁকে বসেছিলেন প্রেমিক। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যাতেই তাঁদের রেজিস্ট্রি বিয়ের প্রথম পর্যায়ের স্বাক্ষর সম্পন্ন হয়েছে।
পাত্রকে আশীর্বাদও করেছেন পাত্রীর বাড়ির লোকজন। শুধু তাই নয়, নিশিগঞ্জের তরুণ-তরুণীর গাঁটছড়া বাঁধার প্রথম পর্যায়ের সাক্ষী হওয়া দু-পক্ষের আত্মীয়-পরিজন থেকে প্রতিবেশীদের ভুঁড়িভোজেরও আয়োজন করা হয়। রাতেই এই যুবক-যুবতির আনুষ্ঠানিক বিয়ের দিন ধার্য করবেন পুরোহিত। অর্থাৎ নিশিগঞ্জের যুবক-যুবতির সাতপাকে ঘোরা এখন কেবল সময়ের অপেক্ষা।
ভালবাসা সঠিক হলে যে ভালোবাসার মানুষ ছেড়ে যেতে পারবে না। মুখ ফিরিয়ে নিলেও ফিরে আসবেই। এমনটাই বিশ্বাস করতেন নিশিগঞ্জের তরুণী। তাই হাইকোর্টের রায়ে চাকরি থেকে বরখাস্ত হওয়ার পর প্রেমিক মুখ ফিরিয়ে নিলেও হাল ছাড়েননি তরুণী। লোকলজ্জা, ভয় উপেক্ষা করে, ভালবাসার মানুষকে নিজের করে পেতে ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করেই নিশিগঞ্জে প্রেমিকের বাড়ির সামনে ধরনায় বসেছিলেন তরুণী।
যদিও তাঁর সঙ্গে সম্পর্কের কথা-ই অস্বীকার করেছিলেন নিশিগঞ্জের যুবক। তবে ওই তরুণীর নিজের ভালোবাসার প্রতি ভরসা ছিল। আর ছিল আত্মবিশ্বাস। তাই প্রেমিক প্রথমদিকে মুখ ফিরিয়ে থাকলেও ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করে তরুণীকে ধরনায় বসে থাকতে দেখে মন বিগলিত হয়ে যায় প্রেমিকের মায়ের। তিনি নিজে হবু বৌমা-কে ঘরে ডাকেন। তারপর আর মুখ ফিরিয়ে থাকতে পারেননি প্রেমিকও।
নিশিগঞ্জের ওই যুবক-যুবতির এদিনই আইনতভাবে মধুরেণ সমাপয়েৎ হবে বলে খবরটি সকালেই নিশ্চিত হয়েছিল। তবে না আঁচালে বিশ্বাস নেই! তাই যতক্ষণ না পর্যন্ত রেজিস্ট্র হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত কিছুটা হলেও মনে আশঙ্কা দেখা দিয়েছিল। রেজিস্ট্রি ফর্মে স্বাক্ষর করার পর হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন তরুণী, তাঁর পরিবার সহ এলাকাবাসী।
রেজিস্ট্রি ফর্মে স্বাক্ষর করার পরই যুবতি বলেন, "ভালো লাগছে যে মনের মানুষকে পেতে চলেছি।" এদিন যুবককে আশীর্বাদও করেন পাত্রীর পরিবার। অন্যদিকে, পাত্র কলেজ শিক্ষক বলেন, "ঘটকের মাধ্যমে বিয়ের কথাবার্তা চলছিল। পরবর্তীতে ও ধরনায় বসে যায়। পরিবর্তিত পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এদিন রেজিস্ট্রি ম্যারেজের প্রথম পর্যায়ের স্বাক্ষর হয়েছে।" তবে শীঘ্রই চারহাত সম্পূর্ণরূপে এক করতে এদিনই পুরোহিত বিয়ের দিন জানাবেন।