ছাপ্পান্ন ভোগঃ জন্মাষ্টমীতে শ্রীকৃষ্ণকে দেওয়া হয় ছাপ্পান্ন ভোগ

আজবাংলা জন্মাষ্টমীর পুজো শুরু হয় জন্মাষ্টমী তিথিতে | বলা হয় ভগবান বিষ্ণুর অষ্টম অবতার শ্রী কৃষ্ণ | তাঁকে আদর করে অনেকে অনেক নামেই ডেকে থাকেন | কেউ বলেন বালগোপাল, নন্দলাল আবার কেউ বলেন শ্রী কৃষ্ণ, কানহা, গোপাল |পুরান মোতে শ্রীকৃষের জন্ম হয়েছিল কারাগারে মাতা দেবকীর গর্ভে | কৃষ্ণজন্মের শুভ তিথিটিই ঘরে ঘরে জন্মাষ্টমী রূপে পালিত হয় | জন্মাষ্টমীতে শ্রীকৃষ্ণের উদ্দেশে সারা দেশ ভোগ নিবেদন করে। ষোড়শপচারে নিবেদিত এই ভোগ ‘ছাপ্পান্ন ভোগ’ নামেই সমাধিক পরিচিত |
প্রশ্ন এখানেই, এই ৫৬ সংখ্যাটির তাৎপর্য ঠিক কী? কেন এই বিশেষ দিনে শ্রীকৃষ্ণকে ৫৬ রকমের ভোগ নিবেদন করা হয় | ‘ভাগবত পুরাণ’ থেকে জানা যায়, দেবরাজ ইন্দ্রের রোষ থেকে তাঁর গ্রামবাসীদের বাঁচাতে শ্রীকৃষ্ণ গিরি গোবর্ধন ধারণ করেছিলেন | এই পর্বতই গ্রামবাসীদের বজ্র-বিদ্যুতের দেবতা ইন্দ্রের হাত থেকে রক্ষা করে | ইন্দ্র বজ্রপাত ঘটান টানা সাত দিন ধরে | কিন্তু শ্রীকৃষ্ণের কনিষ্ঠায় ধৃত গিরি গোবর্ধনের নীচে আশ্রয়প্রাপ্ত গ্রামবাসীদের তাতে কোনও ক্ষতি হয়নি | পরে ইন্দ্র নিজের ভুল বুঝতে পারেন এবং বজ্রপাত থেকে নিবৃত্ত হন | জানা যাই, এই সাতদিন শ্রীকৃষ্ণ কোনও খাদ্যগ্রহণ করেননি | তিনি প্রতিদিন ৮টি পদ আহার করতেন বলেই জানায় ‘ভাগবত পুরাণ’ | সাতদিন অভুক্ত থাকার পরে শ্রীকৃষ্ণ আহারে প্রবৃত্ত হন |
উন্মুক্ত কাঠের আগুনের উপর অনেকগুলো তেলের ল্যাম্প বা বাতি ঝুলিয়ে রাখা হয় আর তার নিচেই সেবকরা এসেই রান্নার কাজ করে । এই রান্নাঘরে এত দ্রুত রান্না করা হয় যে শুধুমাত্র একদিনের প্রস্তুতিতে একসাথে প্রায় দশ হাজার লোক বসে প্রসাদ পায় । আর এমনিতে পাঁচ হাজারের উপর দর্শনার্থী প্রসাদ পেয়ে থাকে । এই রান্নাঘরটি ৯টি ভাগে বিভক্ত । যাদের দুটি ভাগ ২৫০০ বর্গফুট করে এবং বাকি ৭টি ভাগ এ দুটির চেয়ে একটু ছোট হবে । এ রান্নাঘরে রয়েছে ৭৫২টি মাটির তৈরি উনুন যার প্রত্যেকটি দৈর্ঘ্যে তিন বর্গফুট করে এবং উচ্চতায় প্রায় ৪ ফুটেরেও বেশি ।তবে যেটি অদ্ভুত ব্যাপার তা হল রান্না করার বিষয়টি, উনুনগুলোতে একটির উপর একটি পাত্র বসানো হয় এভাবে প্রায় ন'টি পাত্র থাকে।
তারপরেই কৃতজ্ঞ গ্রামবাসীরা তাঁকে খাদ্য নিবেদন করেন | সাতদিনের আট প্রকার পদ, অর্থাৎ ৭ x ৮= ৫৬টি পদ তাঁকে একবারে নিবেদন করা হয় | এই ৫৬ ভোগে থাকে অন্ন, ফল, মিষ্টান্ন, পানীয়, নোনতা খাবার ও আচার | অন্যদিকে এই বছর ১১ অগাস্ট সূর্যোদয়ের পরই শুরু হয়ে যাচ্ছে জন্মাষ্টমী তিথি | পুজোর শুভ মুহূর্ত শুরু হবে ২৪:০৪:৩১ থেকে ২৪:৪৭:৩৮ পর্যন্ত | অর্থাৎ মোট ৪৩ মিনিট ৷ এছাড়া, ১৩ অগাষ্ট রাত ১২ টা বেজে ৪৮ মিনিট থেকে রাত ২ টো বেজে ৩৪ মিনিট পর্যন্ত থাকবে সর্বার্থ সিদ্ধি যোগ | ওই বিশেষ দিনে দুধ-ঘি-মধুতে স্নান সেরে নতুন জামা, গয়না পরে, ফুল-চন্দন-আতরে সেজে ওঠেন আদরের নন্দলাল |
জগন্নাথ দেবের ৫৬-টি ভোগ হল-
১) উকখুড়া অর্থাত্ মুড়ি, ২) নাড়িয়া কোড়া অর্থাত্ নারকেল নাড়ু, ৩) খুয়া অর্থাত্ খোয়া ক্ষীর, ৪) দই, ৫) পাচিলা কাঁদালি অর্থাত্ টুকরো টুকরো কলা, ৬) কণিকা অর্থাত্ সুগন্ধী ভাত, ৭) টাটা খিঁচুড়ি অর্থাত্ শুকনো খিঁচুড়ি, ৮) মেন্ধা মুন্ডিয়া অর্থাত্ বিশেষ ধরণের কেক, ৯) বড়া কান্তি অর্থাত্ বড় কেক, ১০) মাথা পুলি অর্থাত্ পুলি পিঠে, ১১) হামসা কেলি অর্থাত্ মিষ্টি কেক, ১২) ঝিলি অর্থাত্ এক ধরণের প্যান কেক, ১৩) এন্ডুরি অর্থাত্ নারকেল দিয়ে তৈরি কেক, ১৪) আদাপচেদি অর্থাত্ আদা দিয়ে তৈরি চাটনি, ১৫) শাক ভাজা, ১৬) মরীচ লাড্ডু অর্থাত্ লঙ্কার লাড্ডু, ১৭) করলা ভাজা, ১৮) ছোট্ট পিঠে, ১৯) বারা অর্থাত্ দুধ তৈরি মিষ্টি, ২০) আরিশা অর্থাত্ ভাত দিয়ে তৈরি মিষ্টি, ২১) বুন্দিয়া অর্থাত্ বোঁদে, ২২) পাখাল অর্থাত্ পান্তা ভাত, ২৩)খিড়ি অর্থাত্ দুধভাত, ২৪)কাদামবা অর্থাত্ বিশেষ মিষ্টি ২৫) পাত মনোহার মিষ্টি ২৬) তাকুয়া মিষ্টি, ২৭) ভাগ পিঠে, ২৮) গোটাই অর্থাত্ নিমকি, ২৯) দলমা অর্থাত্ ভাত ও সবজি, ৩০) কাকারা মিষ্টি । ৩১) লুনি খুরুমা অর্থাত্ নোনতা বিস্কুট, ৩২) আমালু অর্থাত্ মিষ্টি লুচি, ৩৩) বিড়ি পিঠে, ৩৪) চাড়াই নাডা মিষ্টি, ৩৫) খাস্তা পুরি, ৩৬) কাদালি বারা, ৩৭) মাধু রুচী অর্থাত্ মিষ্টি চাটনি, ৩৮) সানা আরিশা অর্থাত্ রাইস কেক, ৩৯) পদ্ম পিঠে, ৪০) পিঠে, ৪১) কানজি অর্থাত্ চাল দিয়ে বিশেষ মিষ্টি. ৪২) দাহি পাখাল অর্থাত্ দই ভাত, ৪৩) বড় আরিশা, ৪৪) ত্রিপুরি, ৪৫) সাকারা অর্থাত্ সুগার ক্যান্ডি, ৪৬) সুজি ক্ষীর, ৪৭) মুগা সিজা, ৪৮) মনোহরা মিষ্টি, ৪৯) মাগাজা লাড্ডু, ৫০) পানা, ৫১) অন্ন, ৫২) ঘি ভাত, ৫৩) ডাল, ৫৪) বিসার অর্থাত্ সবজি, ৫৫) মাহুর অর্থাত্ লাবরা, ৫৬) সাগা নাড়িয়া অর্থাত্ নারকেলের দুধ দিয়ে মাখা ভাত !